নোবেল বিজয়ী প্রথম নারী কে ?

প্রশ্ন:  নোবেল বিজয়ী প্রথম নারী কে ? 


ক.  মালালা ইউসুফজাই

খ.  মাদার তেরেসা 

গ.  মাদাম কুরি

ঘ.  সেলমা রেগারলেফ


উত্তর:  (গ) মাদাম কুরি  । 


ব্যাখ্যা:-

নোবেল বিজয়ী প্রথম নারী হলেন  " মাদাম কুরি " । সাহিত্যে নোবেলজয়ী প্রথম নারী সুইডেনের সেলমা রেগাললেফ  । 


নোবেল বিজয়ী প্রথম নারী হলেন মেরি কুরি (Marie Curie), যিনি পদার্থবিজ্ঞানে ১৯০৩ সালে এবং রসায়নে ১৯১১ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি শুধু নোবেল পুরস্কারজয়ী প্রথম নারীই নন, তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি দুটি পৃথক বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। তার অসামান্য গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি নারীদের জন্য বিজ্ঞান ক্ষেত্রে একটি নতুন পথ তৈরি করেছে। এই প্রবন্ধে মেরি কুরির জীবন, তার গবেষণা, এবং নোবেল পুরস্কার পাওয়ার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।


 মেরি কুরির প্রাথমিক জীবন:


মেরি কুরি জন্মগ্রহণ করেন ৭ নভেম্বর, ১৮৬৭ সালে ওয়ারশ, পোল্যান্ডে। তার আসল নাম ছিল মারিয়া স্ক্লোদোভস্কা। তার পরিবার শিক্ষার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিত এবং তার বাবা-মা উভয়েই শিক্ষক ছিলেন। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তাকে বেশ কিছু কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল, তবে তার পড়াশোনার প্রতি অঙ্গীকার অটুট ছিল।


প্যারিসে পড়াশোনা ও পিয়েরে কুরির সঙ্গে সাক্ষাৎ:


১৮৯১ সালে মেরি কুরি প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য যান। সেখানে তিনি পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নে অধ্যয়ন করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি পিয়েরে কুরির সঙ্গে পরিচিত হন, যিনি একজন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন। পরের বছর তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাদের বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা শুরু হয়।


 রেডিয়াম এবং পোলোনিয়ামের আবিষ্কার:


মেরি এবং পিয়েরে কুরি তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং ১৮৯৮ সালে দুটি নতুন মৌল, রেডিয়াম এবং পোলোনিয়াম আবিষ্কার করেন। তাদের এই গবেষণা তেজস্ক্রিয়তার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে এবং এই আবিষ্কারগুলি তেজস্ক্রিয়তার ধারণা এবং তার ব্যবহারিক প্রয়োগে বিপ্লব ঘটায়।


 নোবেল পুরস্কার:


১৯০৩ সালে মেরি কুরি এবং পিয়েরে কুরি যৌথভাবে এবং অ্যান্টনি হেনরি বেকেরেলের সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাদের এই পুরস্কার তেজস্ক্রিয়তার নতুন ধারণা এবং গবেষণার জন্য প্রদান করা হয়। মেরি কুরি এই পুরস্কারজয়ী প্রথম নারী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।


১৯১১ সালে মেরি কুরি একাই রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এই পুরস্কার তার রেডিয়াম এবং পোলোনিয়াম মৌল দুটি আবিষ্কারের জন্য এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলির বিশ্লেষণের জন্য প্রদান করা হয়। তিনি প্রথম ব্যক্তি হিসেবে দুটি পৃথক বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জয় করেন।


 বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং প্রভাব:


মেরি কুরির গবেষণা তেজস্ক্রিয়তা এবং এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি বিশাল অগ্রগতি এনে দেয়। তার গবেষণার ফলাফল আজও চিকিৎসা এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে প্রভাবিত করছে। তার কাজের জন্যই রেডিয়েশন থেরাপি ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।


 উত্তরাধিকার:


মেরি কুরির অবদান শুধুমাত্র বিজ্ঞানেই সীমাবদ্ধ নয়, তিনি নারীদের জন্য একটি শক্তিশালী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিজ্ঞান ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের পথপ্রদর্শক হিসেবে তিনি আজও অনুপ্রেরণার প্রতীক। তার জীবন ও কাজ প্রমাণ করে যে নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম, এবং অঙ্গীকারের মাধ্যমে কোনো প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করা সম্ভব।


 উপসংহার:


মেরি কুরি ছিলেন এক অনন্য প্রতিভা, যার গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মানব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তিনি নোবেল পুরস্কারজয়ী প্রথম নারী এবং দুটি পৃথক বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারজয়ী প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয়। তার কাজ এবং আদর্শ আমাদের সকলের জন্য এক বিশাল প্রেরণা এবং বিজ্ঞান ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতির একটি মাইলফলক।


Next Post Previous Post