শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রথম নারী কে ?

প্রশ্ন:  শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রথম নারী কে ? 


ক.  মালালা ইউসুফ 

খ.  বার্থা ভন সুটনার

গ.  শিরিন এবাদি 

ঘ.  মাদার তেরেসা 


উত্তর:  (খ) বার্থা দভন সুটনার  । 


ব্যাখ্যা:-


শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জনকারী প্রথম নারী হলেন বারনেস বার্থা ভন সুটনার (Baroness Bertha von Suttner)। তিনি ১৯০৫ সালে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার লাভ করেন। বার্থা ভন সুটনার একজন অস্ট্রিয়ান লেখিকা এবং শান্তিকর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার কাজ এবং অবদান শান্তি আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হয়। 

বার্থা ভন সুটনারের জন্ম ১৮৪৩ সালের ৯ই জুন অস্ট্রিয়ার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তার পিতা ছিলেন একজন সামরিক কর্মকর্তা। বার্থার ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা এবং সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ ছিল। তিনি বিভিন্ন ভাষা শিখেন এবং সাহিত্য ও সঙ্গীতে দক্ষতা অর্জন করেন। তবে তার জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা প্রচার করা।

বার্থার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো তার আলফ্রেড নোবেলের সঙ্গে সম্পর্ক। আলফ্রেড নোবেল, যিনি ডিনামাইটের আবিষ্কারক এবং নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা, বার্থার শান্তি প্রচেষ্টার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। বার্থা নোবেলের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করেন এবং তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বার্থার শান্তির জন্য তার দৃঢ় বিশ্বাস এবং কাজ আলফ্রেড নোবেলের উপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং তিনি নোবেল পুরস্কারের একটি বিভাগ শান্তির জন্য উৎসর্গ করেন।

বার্থার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হলো তার উপন্যাস "ডাই ওয়াফেন নিডার!" (Die Waffen nieder!) বা "ডাউন উইথ আর্মস!"। ১৮৮৯ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং শান্তির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে লেখা। এই বইটি ইউরোপজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বইটির মাধ্যমে বার্থা যুদ্ধের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রচার করেন এবং শান্তি আন্দোলনের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

বার্থা ভন সুটনার তার জীবদ্দশায় বিভিন্ন শান্তি সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং আন্তর্জাতিক শান্তি কংগ্রেসে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বিভিন্ন দেশের নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের যুদ্ধবিরোধী নীতি গ্রহণে উৎসাহিত করেন। তার অবদান শুধু সাহিত্যিক ক্ষেত্রেই নয়, বরং বাস্তব জীবনেও ছিল বিশাল। 

১৯০৫ সালে, বার্থা ভন সুটনার তার শান্তির জন্য প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি প্রথম নারী হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন এবং তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত, তিনি শান্তি ও মানবতার জন্য কাজ করে গেছেন।

বার্থা ভন সুটনারের জীবন এবং কাজ শান্তি আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে। তার সাহস, ধৈর্য এবং মানবতার প্রতি ভালোবাসা আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী প্রথম নারী হিসেবে, বার্থা ভন সুটনার আমাদের দেখিয়েছেন যে শান্তির জন্য কাজ করা কখনও বৃথা যেতে পারে না এবং এটি মানবতার সর্বোচ্চ কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয়। তার জীবন ও কাজ আমাদের সকলের জন্য একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।


Next Post Previous Post