নোবেল বিজয়ী মুসলিম নারী কতজন ?
প্রশ্ন: নোবেল বিজয়ী মুসলিম নারী কতজন ?
ক. ৫
খ. ৪
গ. ১২
ঘ. ১৫
উত্তর: (খ) ৪ জন ।
ব্যাখ্যা:-
নোবেল পুরস্কার পৃথিবীর সর্বাধিক সম্মানিত পুরস্কারগুলির মধ্যে একটি, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রদান করা হয়। ইতিহাসের পাতায় নোবেল পুরস্কারজয়ী মুসলিম নারীদের সংখ্যা সীমিত হলেও, তাদের অবদান বিশাল ও প্রশংসনীয়। এ ধরনের নারীরা প্রমাণ করেছেন যে ধর্ম, সংস্কৃতি বা জাতি কোনো বাধা হতে পারে না মানবতার কল্যাণে কাজ করার জন্য।
প্রথমে, ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মা তেরেসার কথা বলা যেতে পারে। যদিও তিনি আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত ছিলেন এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন, তার কাজগুলো মুসলিম দেশগুলোতেও প্রচুর প্রশংসিত হয়েছে। মা তেরেসা তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সেবা করার জন্য এবং তার কাজগুলো ছিল প্রকৃত মানবতার উদাহরণ।
এবার ২০০৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী শিরিন এবাদির কথা উল্লেখ করা যাক। ইরানের এই মহিয়সী নারী মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। শিরিন এবাদি প্রথম ইরানি নারী হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ইরানের বিচার বিভাগে প্রথম নারী বিচারক হিসেবে কাজ করেন এবং পরবর্তীতে মানবাধিকার রক্ষার জন্য কাজ করেন। তার কাজের মধ্যে নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিরিন এবাদি তার জীবনের বিভিন্ন সময় অনেক বাধা-বিপত্তি ও হুমকির সম্মুখীন হলেও, তিনি কখনো পিছপা হননি এবং নিজের আদর্শের প্রতি অটল ছিলেন।
২০১১ সালে, লেইমা গবোয়ি এবং তাওয়াক্কুল কারমান শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেন। লেইমা গবোয়ি লাইবেরিয়ান নারী, যিনি গৃহযুদ্ধের সময় নারীদের সংগঠিত করে শান্তির জন্য আন্দোলন করেন। তাওয়াক্কুল কারমান ইয়েমেনি সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মী হিসেবে প্রখ্যাত। তিনি আরব বসন্তের সময় ইয়েমেনের আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং তার সাহসিকতা ও নেতৃত্বের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান। তাওয়াক্কুল কারমান নোবেল পুরস্কার জয়ী প্রথম আরব নারী এবং তিনি নারীর অধিকার এবং গণতন্ত্রের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন।
২০১৪ সালে মালালা ইউসুফজাই প্রথম পাকিস্তানি নারী হিসেবে নোবেল পুরস্কার পান। মাত্র ১৭ বছর বয়সে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয় করে তিনি ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী হিসেবে বিশ্ববাসীর নজর কাড়েন। মালালা নারী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে অবদান রাখার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। তিনি তালেবানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েও নারী শিক্ষার অধিকার রক্ষার জন্য তার সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন এবং তার কাজের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রেরণা জুগিয়েছেন।
এই নারীরা প্রমাণ করেছেন যে, ধর্ম বা সংস্কৃতির পার্থক্য কোনো বাধা হতে পারে না মানবতার কল্যাণে কাজ করার জন্য। তাদের কর্ম ও সংগ্রাম আমাদের সমাজের উন্নয়নে এবং নারী অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা আমাদের সকলকে সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগান, যাতে আমরা আমাদের সমাজে এবং বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি।
মুসলিম নারীদের এই নোবেল পুরস্কারজয়ী কৃতিত্ব আমাদের সকলের জন্য একটি মহান অনুপ্রেরণা। তাদের কাজ ও সংগ্রাম আমাদের দেখায় যে, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে মানুষ অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করতে পারে এবং মানবতার কল্যাণে অবদান রাখতে পারে।